1. [email protected] : Admin : sk Sirajul Islam siraj siraj
  2. [email protected] : admi2017 :
  3. [email protected] : Sk Sirajul Islam Siraj : Sk Sirajul Islam Siraj
ব্রেকিং নিউজ :
বিনোদন :: গান গাইতে গাইতে মঞ্চেই গায়কের মর্মান্তিক মৃত্যু!,  খেলার খবর : অনূর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপ চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ, বিমানবন্দরে যুবাদের জানানো হবে উষ্ণ অভ্যর্থনা,

বেকার সমস্যা: সমাধানে মাশরুম চাষের ভূমিকা

  • আপডেট টাইম : বুধবার, ২৬ অক্টোবর, ২০২২
  • ২১৩ বার পঠিত

আফতাব চৌধুরী:

সমগ্র বিশ্ব জুড়ে বেকার সমস্যা হু হু করে বাড়ছে এবং এতে কর্মসংস্থানের অভাব দেখা দিয়েছে। বেকার সমস্যা সমাধানে অনেক রাষ্ট্র
নায়করা মহাসঙ্কটে পড়েছেন। আমাদের দেশে লক্ষ লক্ষ মানুষ বেকার সমস্যায় জর্জরিত। কর্মসংস্থানের অভাবে অনেক বেকার যুবক-যুবতীরা পথভ্রষ্ট হয়ে বিপথগামী হচ্ছেন। অনেকে আবার আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে বাধ্য হচ্ছেন।
আমাদের অবস্থাটা কি পর্যায়ে, বেশ ক বছর থেকে চাকরির দরজা প্রায় বন্ধ। বেকার সমস্যা বৃদ্ধির দরজা খোলা। যার দরুন বেকারদের মনে শান্তি নেই। এ অবস্থায় কৃষিকার্য ছাড়া অন্য কোনও উপায়ে বেকার সমস্যা সম্পূর্ণ ভাবে সমাধান করা যাবে না বলে বিজ্ঞজনেরা মত ব্যক্ত করেছেন। স্বল্প অর্থ উপার্জন করতে হলে অত্যধিক প্রোটিনযুক্ত আহার মাশরুম চাষ করে অনেক বেকার স্বনির্ভর হয়েছেন এবং বর্তমানেও হচ্ছেন। মাশরুম চাষ প্রণালী নিম্নে আলোচনা করা হল। মাশরুম এক প্রকার ছত্রাক জাতীয় উদ্ভিদ।
বিভিন্ন গুণাগুণের জন্য মাশরুম আন্তর্জাতিক মানের খাদ্য হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেছে। ফলে মাশরুমের চাহিদা যেমন ক্রমবর্ধমান, তেমনি মাশরুমের চাষও দ্রæত স¤প্রসারিত হচ্ছে। মাশরুম চাষ করে বেকার সমস্যাও দূর করা সম্ভব। মাশরুম চাষ করতে জমি বা মাটির প্রয়োজন নেই। খুব সহজে স্বল্প অর্থ ব্যয়ে ঘরে চাষ করা যায়।
প্রথমে হচ্ছে মাশরুমের জাত নির্বাচন ঃ পৃথিবীতে প্রায় ২০০০ প্রজাতির খাওয়ার উপযোগী মাশরুম আছে, এর মধ্যে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি
৭৫টি প্রজাতির মাশরুম উৎপাদন করা যায়। আমাদের দেশে এর মধ্যে তিনটি জাতের উৎপাদন বেশি গ্রহণযোগ্য। এগুলো হল : (১) পোয়াল মাশরুম ঃ এটা গ্রীষ্মকালে ধানের খড়ের উপরে ৩০ ডিগ্রি থেকে ৩৫ ডিগ্রি সে: তাপমাত্রায় মে থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত চাষ করা যায়। (২) ঝিনুক মাশরুম ঃ এটাকে ধিংরি ছাতুও বলা হয়। এ জতীয় মাশরুম ধানের খড়ের উপর শীতকালে ২০ ডিগ্রি থেকে ৩০ ডিগ্রি সে: তাপমাত্রায় চাষ করা যায়। আমাদের দেশে অক্টোবর মাস থেকে এপ্রিল পর্যন্ত চাষ করা সম্ভব। (৩) রোতাম মাশরুম ঃ সাধারণত ১৪ ডিগ্রি থেকে ২০ ডিগ্রি সে: তাপমাত্রায় চাষ করা যায়।
গ্রীষ্ম প্রধান অঞ্চলে শুধুমাত্র ডিসেম্বর থেকে ফেব্রæয়ারী মাস পর্যন্ত চাষ করা যায়। ঝিনুক মাশরুম চাষ পদ্ধতি ঃ ঝিনুক মাশরুমের উৎপাদন ক্ষমতা অন্যান্য জাতের মাশরুমের চেয়ে অনেক বেশি। এগুলো দেখতে ধবধবে সাদা,সুন্দর ও মাংসুল। আমাদের জলবায়ুতে অক্টোবর থেকে এপ্রিল মাস পর্যন্ত এদের চাষ বেশি লাভজনক। উপযুক্ত ঠান্ডা গৃহের ব্যবস্থা করতে পারলে গ্রীষ্মকালেও এর চাষ করতে যে যে সামগ্রীর প্রয়োজন হয় সেগুলো হল : (ক) মাশরুম বীজ বা স্পন : মাশরুম বীজ অর্থাৎ স্পনের রং সর্বদা সাদা ধবধবে। বর্তমানে এ বীজ ২০০ গ্রামের পলিপ্যাকে পাওয়া যায়। বিশুদ্ধ স্পন বিশ্বস্ত প্রতিষ্ঠান থেকে সংগ্রহ করতে হবে। এককেজির শুকনো খড় দিয়ে যে বেড প্রস্তুত করা হবে তাতে ১০০ গ্রাম বীজের প্রয়োজন হয়। (খ) মাশরুম চাষের ঘর : বিশেষজ্ঞদের মতে ঝিনুক মাশরুম চাষের জন্য দুই কোঠাযুক্ত ঠান্ডা বায়ু চলাচল করতে পারে এমন ঘরের প্রয়োজন। দুটো কোঠার একটিতে যাতে আলো প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য কালো কাপড়ের পর্দা চারদিকে ঝুলিয়ে দিতে হবে,যাকে অন্ধকার কোঠা বা স্পন রানিং রুম বলে। আর অন্য কোঠাকে রানিং রুম বলে। আর অন্য কোঠাতে শুধু আবছা আলো প্রবেশ করবে, যাকে চাষের কোঠা বলে। (গ) ধানের খড় : ধান কাটার সঙ্গে সঙ্গে বৃষ্টি পায়নি এমন শাইল ধানের পরিষ্কার খড় এ চাষের জন্য উত্তম। (ঘ) খড় সিদ্ধ করার কড়াই : মাশরুম চাষের জন্য আনা খড়গুলো কেটে ভিজিয়ে রাখা ও সিদ্ধ করার জন্য একটি বড় কড়াইর প্রয়োজন। (ঙ) পলিপপ ব্যাগ : বেড প্রস্তুত করার জন্য ৬০ সে মি দ্ধ৪০ সে মি মাপের পলিপপ ব্যাগের দরকার। (চ) মাচা : বেড রাখার জন্য অন্ধকার ঘরে মাচা এবং চাষের ঘরে বেডগুলো ঝুলানোর ব্যবস্থা করা। (ছ) পাঞ্চ যন্ত্র : পলিথিন ব্যাগ ফুটো করার জন্য পাঞ্চযন্ত্র বা অন্য ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। (জ) ¯েপ্রয়ার যন্ত্র বেডগুলোর উপর পানি ¯েপ্র করার জন্য একটি ¯েপ্রয়ার যন্ত্রের প্রয়োজন।
মাশরুম চাষের পদ্ধতি ঃ একটি বেড প্রস্তুত করার জন্য শুকনো ১ কেজি প্রস্তুত করার শাইল ধানের খড় ৪-৫ ইঞ্চি মাপের টুকরায় কেটে নিতে হবে।
কাটা খড় পরিষ্কার পানিতে ১২ ঘন্টা ডুবিয়ে রাখতে হবে। একটি বড় কড়াইতে পানিতে প্রায় ৮৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত গরম করে সে
পানিতে ১২ ঘন্টা ডুবিয়ে রাখা খড়গুলো ৩০ মিনিট সিদ্ধ করতে হবে। সিদ্ধ করার সময় লক্ষ্য রাখতে হবে যেন সব খড় সমান ভাবে সিদ্ধ হয়। এ খড় সিদ্ধ করার উদ্দেশ্য হল খড়ের মধ্যে থাকা সমস্ত জীবাণু ধ্বংস করা এবং খড়ে থাকা খাদ্য-দ্রব্য মাশরুমের জন্য সহজলভ্য করা। সিদ্ধ করা খড় কড়াই থেকে তুলে পাকা মেঝেতে বা চাটাইয়ের উপর রেখে ঠান্ডা করতে হবে এবং পানি ঝড়াতে হবে।
লক্ষ্য রাখতে হবে যেন সিদ্ধ করা খড় শুকিয়ে না যায়। পলিথিন ব্যাগ থেকে বীজ বের করে ক্ষুদ্র ক্ষদ্র টুকরো এমন ভাবে ভেঙ্গে নিতে হবে যেন বীজযুক্ত প্রতিটি দানা আলাদা হয়ে যায়। ২০০ গ্রাম স্পন বা বীজ টুকরোকে সমান দুভাগে ভাগ করে রাখুন দুটো বেডের জন্য। একটি ৬০ সে মি দ্ধ৪০ সে মি মাপের পলিথিন ব্যাগ নিয়ে তাতে ৪০ থেকে ৬০ টি ফুটো করে নিতে হবে যাতে এ ফুটো দিয়ে বেডের মধ্যে বায়ু চলাচল করতে পাওে।

ফুটো করা পলিথিন ব্যাগটি নিয়ে সে ব্যাগে সিদ্ধ করা খড় ঢুকাবেন। প্রথমে ৪-৫ ইঞ্চি উঁচু খড়ের স্তর দিয়ে তার উপরে ২৫ গ্রাম
পরিমাণ বীজ টুকরো সমানভাবে ছড়িয়ে দিতে হবে। এভাবে পলিথিন ব্যাগের মধ্যে পাঁচটি খড়ের স্তরের মধ্যে চার বার বীজ দিয়ে ঠেসে সমান ভাবে ব্যাগের মুখ বেঁধে দিলেই একটা উপযুক্ত বেড প্রস্তুত হবে। খড় ও বীজ ঢুকাবার আগে ব্যাগের তলদেশটা বেঁধে নিলে সুন্দর গোল বেড প্রস্তুত হবে।
প্রস্তুত বেড অন্ধকার ঘরে মাচার উপরে ১৪ দিন রেখে দিন। ১৪ দিন পর বীজ গজিয়ে ব্যাগের মধ্যে খড়ের চারদিকে ছড়িয়ে পড়বে এবং ছত্রাকের সাদা অনুসূত্র দেখা যাবে। এরূপ করাকে বীজ রানিং বলে। বীজ রানিং সম্পূর্ণ হওয়ার পর বেড অন্ধকার কোঠা থেকে সরিয়ে নিয়ে পলিথিন ব্যাগ থেকে বের করে উৎপাদন কক্ষে ঝুলিয়ে বা মাচায় রাখতে হবে। সতর্কভাবে বেড বের করলে পলিথিন ব্যাগটি আবার ব্যবহার করা যায়।
উন্মুক্ত করা ব্যাগে প্রতিদিন সকাল, বিকাল পানি ছিটিয়ে ভিজিয়ে রাখতে হবে। পলিথিন ব্যাগ থেকে বেড বের করার ৭-১০ দিন পর মাশরুম সংগ্রহ করা যাবে। এ থেকে ৭-১০ দিন পরপর মোট ৩ বার মাশরুম সংগ্রহ করা যায়। এরপরও মাশরুম বের হতে পারে তবে তা অনেক কম হবে। মাশরুম সংগ্রহ করা শেষ হয়ে গেলে বেডটিকে পচন সার হিসেবে ব্যবহার করা যায় অথবা গরুকে খাওয়ানো যাবে। দেখা গেছে গাভীকে খাওয়ালে দুধ উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
উৎপাদন ঃ একটি ১ কেজি শুকনো খড়ের বেড থেকে ৬০০-৮০০ গ্রাম মাশরুম উৎপাদন হয়। তাজা মাশরুম ১-২ দিনের মধ্যে খাওয়া উচিত। অন্যথায় ফ্রিজে বা শুকিয়ে রাখতে পারেন। ফ্রিজে সংরক্ষণ ঃ মাশরুম সংগ্রহ করার পর পরিষ্কার করে একটি কাগজের ব্যাগে ভরা দরকার। এরপর এ ব্যাগটি অন্য এক পলিথিন ব্যাগে ঢুকাবার পর ফ্রিজের মধ্যে ৫-৭ দিন রাখা যায়। শুকিয়ে সংরক্ষণ করা ঃ সংরক্ষণের জন্য রৌদ্রে কিংবা ড্রাইয়ার যন্ত্রে মাশরুম শুষ্ক করা হয়। টাটকা মাশরুম তুলে নেওয়ার পর পরিষ্কার করে নিয়ে একটি পাতলা কাপড়ে বেঁধে ৮৫ ডিগ্রি সে: উষ্ণতায় পানিতে ১৫ সেকেন্ড ডুবিয়ে রেখে নিতে হবে। তারপর পানি ঝরিয়ে নিয়ে ছোট ছোট টুকরায় কেটে নিয়ে শুকাতে দিতে হবে। শুকানোর জন্য পরিষ্কার চাটাইতে বা কাপড়ের উপরে মেলে দিয়ে কড়া রোদ্রে ৩ থেকে ৪ দিন শুকাতে হয়। সঠিক মাত্রায় শুকালে আঙ্গুলের চাপে বিস্কুটের মত ভেঙ্গে যাবে। শুকানোর পর রোদ্র থেকে তুলেই টিনের ডিবায় বা কাঁচের জারে অথবা পলিথিন ব্যাগে ভরে মুখ ভাল করে বন্ধ করে রাখতে হবে যাতে বাতাস ঢুকতে না পারে। শুকনো মাশরুম নিশ্চিন্তভাবে২-৩ মাস সংরক্ষণ করা যায়। তবে মাসে এক বার খুলে পরীক্ষা করে দরকার মত পুনরায় রোদ্রে দিয়ে অনেকদিন ভালভাবে রাখা যায়।
মাশরুমের খাদ্যগুণ ঃ মাশরুম যেমন খেতে সুস্বাদু ও সহজপ্রাচ্য, তেমন এতে সকল প্রকারের শরীর গঠনের ও স্বাস্থ্য রক্ষার প্রয়োজনীয় প্রোটিন,ভিটামিন ও খনিজ পদার্থ আছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও মাশরুমকে সুষম খাদ্য হিসেবে সুপারিশ করেছে। মাশরুম অপুষ্টি, উচ্চ রক্তচাপ, ক্যান্সার ও এইডস রোগ প্রতিরোধ করে। তাছাড়া মাশরুমকে বহুমূত্র রোগীর উত্তম খাদ্য নামে অভিহিত করা হয়। কারণ মাশরুমে অতিকম মাত্রায় খাদ্যপ্রাণ প্রোটিনের সমতায় আছে। গর্ভবতী নারী ও হৃদরোগীদের সুষম আহারও এ মাশরুম।
খাদ্য হিসেবে মাশরুম ব্যবহার ঃ মাশরুম দিয়ে অনেক সুস্বাদু, সহজপ্রাচ্য ও পুষ্টিকর তৈরি করা যায়। যেমন করে অন্যান্য শাক-সব্জি রান্না করা হয়, তেমনি মাশরুমের নানা রকমের ব্যঞ্জন প্রস্তুত করা যায়। মাশরুম ফ্রাই,একক তরকারি বা অন্যান্য সব্জির সঙ্গে মিশ্র সব্জি তরকারি বানানো যায়। নিরামিষ সব্জির মত বা মাংসের মত করে রান্না চলে। মাশরুমের স্যালাড এবংমুখরোচক আহার বানানো যায়। টাটকা বা শুকানো মাশরুমের স্যুপ বানিয়ে পরিবেশন করা যায়। শুষ্ক মাশরুম চূর্ণের এক আকর্ষণীয় সুগন্ধ আছে। এ গুণকে কাজে লাগিয়ে মাশরুম দিয়ে কেক, প্রেষ্টি এবং বিস্কুট তৈরি করা যেতে পারে। এ মাশরুম চূর্ণ ব্যবহার করে কৃত্রিম গন্ধ দ্রব্যের ব্যবহার কমানো যায় এবং মাশরুম অধিক প্রোটিন যুক্ত হওয়ার জন্য অধিক পুষ্টিকর। আমাদের দেশের নিরামিষভোজী মানুষজন ইদানিং মাশরুমের প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছেন। তাঁদের সামনে মাশরুম উপস্থিত হচ্ছে অনন্য এক স্বাদ ও পুষ্টির ভান্ডার নিয়ে। সাংবদিক ও কলামিস্ট। বৃক্ষরোপণে জাতীয় পুরস্কার (১ম স্বর্ণপদক) প্রাপ্ত।

প্লিজ আপনি ও অপরকে নিউজটি শেয়ার করার জন্য অনুরোধ করছি

এ জাতীয় আরো খবর..